1. towkir.skit@gmail.com : admin :
  2. towkir29@gmail.com : adminrafiq :
শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৮ পূর্বাহ্ন
Title :
চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আলহাজ্ব সরোয়ার নিজাম এর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল মহাদেবপুরে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে বিশাল নির্বাচনী কর্মী সভা অনুষ্ঠিত পোরশায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ডাকাত সদস্য আটক-৮ কর্ণফুলীতে শিক্ষাবিদ, মানবিক ব্যক্তিত্ব ও সমাজসেবার আলোকবর্তিকা আশরাফ আলী মেম্বারের ইন্তেকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৫৩ বিজিবির অভিযানে ইয়াবাসহ আটক ১ বাঘার চকরাজাপুরে তারুণ্যের সমাবেশ অনুষ্ঠিত নজিপুরে বণিক কমিটির নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম নিলেন এ জেড মিজান কুমিল্লা জেলা পুলিশে মাসিক কল্যাণ সভা অনুষ্ঠিত: ভালো কাজের স্বীকৃতিতে পুরস্কার প্রদান ঢাকায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী মনোনয়ন ও সাংগঠনিক প্রস্তুতি বিষয়ক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী ব্যবসায়ীর মৃত্যু

মায়ের পরকীয়ার বলি হলেন বিচারকের ছেলে

Reporter Name
  • Update Time : শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৭ Time View

মোঃ আব্দুল মালেক রাজশাহী

ভালোবাসার নামে নৃশংস প্রতিশোধ?— আবেগ, ক্ষমতা ও প্রতিশোধের জালে এক পারিবারিক ট্র্যাজেডি
রাজশাহীর ডাবতলা এলাকায় গত ১৩ নভেম্বর বিকেল সাড়ে ৩টায় মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আব্দুর রহমানের বাসায় ঘটে যাওয়া ছুরিকাঘাতের ঘটনায় পুরো দেশ স্তম্ভিত। এই নৃশংস হামলায় বিচারকের পুত্র তাওসিফ রহমান সুমন (২২) নিহত এবং বিচারকের স্ত্রী তাসমিন নাহার (লুসি) গুরুতর আহত হয়েছেন। মামলার মূল অভিযুক্ত লিমন মিয়া আটক হলেও, ঘটনার পটভূমি ও তার স্বীকারোক্তির বিবরণ উন্মোচন করলে দেখা যায় এটি কেবল একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়, বরং ‘পরকীয়া-ভিত্তিক সহিংসতা’ ও ‘ক্ষমতার অসাম্য’ কেন্দ্রিক এক জটিল মনস্তাত্ত্বিক সংঘাতের ফল। এই প্রতিবেদনটি আদালতবহির্ভূত মুখবন্ধ কাহিনী, অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি এবং স্থানীয় সূত্রের ভিত্তিতে করা একটি গভীর অনুসন্ধানী বিশ্লেষণ, যা পরকীয়ার ভয়াবহতা, শক্তি-অসাম্য এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার ওপর প্রশ্ন তুলে ধরে।

অভিযুক্তের কণ্ঠে কাহিনী: পাঁচ বছরের সম্পর্ক ও ক্ষোভের বিস্ফোরণ আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন লিমন মিয়া সাংবাদিকদের কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তা ঘটনার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তিনি নিজেকে ভুক্তভোগী ও তাসমিনা লুসিকে তার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা হিসেবে দাবি করেছেন।
পাঁচ বছরের সম্পর্ক: লিমন জানান, লুসির সঙ্গে তার দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল, যা সম্প্রতি লুসির একতরফা প্রত্যাখ্যান ও ফোন না ধরার কারণে ভেঙে যায়। ক্ষমতার দাপট ও হুমকি: লিমন অভিযোগ করেন, লুসির স্বামী (বিচারক) তাকে মেসেঞ্জারে হুমকি দিয়েছেন এবং ‘ভালোবাসার প্রমাণ’ দেখতে বলেছেন। অন্যদিকে, লুসি তাকে সিলেটে একাধিকবার জেলে ঢুকিয়েছেন, যা তার বাবা (বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্যানেল চেয়ারম্যান) এর সম্মানহানি ঘটিয়েছে।

সংঘর্ষের মুহূর্ত: লিমনের দাবি, তিনি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে আলোচনার জন্য গিয়েছিলেন। কিন্তু লুসি দরজা বন্ধ করে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিলে, বাবার সম্মান রক্ষার তীব্র ক্ষোভে তিনি দরজা ভেঙে হাতে কোপ দেন। এরপর লুসির ছেলে সুমন বাধা দিলে আত্মরক্ষার্থে তিনি সুমনের পায়ে কামড় দেন।ন্যায়বিচারের দাবি: লিমন নিজেকে অসহায় মধ্যবিত্ত দাবি করে বলেন, লুসিও পরকীয়া নামক অপরাধ করেছেন, তাই তারও সাজা হওয়া উচিত। তিনি দাবি করেন, তার যদি ফাঁসিও হয়, তবে যেন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় এবং লুসির প্রতি তার ভালোবাসা অটুট থাকবে।

কোথায় ঘষামিল নেই: শক্তি-অসাম্য ও মানসিক সংঘাতএই ঘটনায় দুটি বিষয় বিশেষভাবে প্রশ্নবিদ্ধ:
১. পক্ষপাতে ক্ষমতার ব্যবহারঅভিযুক্ত ও ভুক্তভোগীর বর্ণনায় বারবার ‘শক্তির ব্যবহারের’ আভাস পাওয়া যায়। ভুক্তভোগীর স্বামীর আদালত পদ ও সামাজিক মর্যাদাই একটি পক্ষকে প্রায় অখণ্ড ক্ষমতা দান করে। অভিযুক্ত লিমন মিয়ার বক্তব্যে বারবার ফিরে আসে ‘শক্তিশালী পক্ষের’ ভয় ও প্রতিশোধের হুমকি। সমাজতাত্ত্বিকরা মনে করেন, এমন শক্তি-অসাম্য পরিস্থিতি কমজোর পক্ষের জীবনে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করে এবং সহিংসতাকে উসকে দিতে পারে।
২. প্রমাণ ও স্বাক্ষ্য-গ্যাপের মনস্তত্ত্বলিমনের বক্তব্য মূলত আবেগ প্রধান— “তাকে আমি ভালোবেসে গেছি; আমাকে আদালত-সামর্থ্য দেখিয়ে ঔদ্ধত্য দেখানো হয়েছে”। এ ধরনের আবেগপ্রবণ বক্তব্য ফৌজদারী আইনের বাইরে হলেও, এটি হত্যাকাণ্ডের মূলে থাকা আবেগ, আত্ম-অপমান ও প্রতিশোধের মতো মানসিক সংকটকে তুলে ধরে। প্রশ্ন উঠছে, কতটা দ্রুত ও অস্থায়ীভাবে প্রশাসনিক তৎপরতা এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা দেওয়া হলে পরিস্থিতি এ পর্যায়ে পৌঁছত না?

পরকীয়া-ভিত্তিক সহিংসতা: বিশ্ব ও দেশের প্রেক্ষাপটসমাজবিজ্ঞানীদের মতে, পরকীয়া বা সম্পর্ক-ভিত্তিক বিরোধ অনেক সময় ভয়াবহ সহিংসতায় রূপ নেয়। এ ধরনের ঘটনার সাধারণ কারণগুলো হলো: জৈবিক/মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া (ঈর্ষা, উদ্দীপনা ও অবমূল্যায়ন), পিতৃতান্ত্রিক ধারণা (‘মানহানি’ মেটানো), ক্ষমতার অসম বণ্টন এবং মানসিক স্বাস্থ্য-সামঞ্জস্যের অভাব।সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ (অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, ঢাবি, ধারণামূলক):অধ্যাপক ইসলাম মনে করেন, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে ব্যক্তিগত বিবাদ যখন ‘মান-সম্মানে’র প্রশ্নে জড়িয়ে যায়, তখন সহিংস প্রতিক্রিয়া অনিবার্য হয়ে ওঠে। ক্ষমতাসীন পক্ষের ‘নিপীড়ন’ ও প্রতিশোধের আশঙ্কা অপর পক্ষের মানসিক চাপ অত্যন্ত বাড়িয়ে দেয়—ফলে অপ্রত্যাশিত বহ্নিশ্বাসী ঘটনা ঘটতে পারে। এই ক্ষেত্রে নিহত ছেলেটি সুমনের মায়ের সম্পর্কের জেরে সৃষ্ট সংঘাতের বলি হয়েছে।মনোচিকিৎসা/ফরেনসিক দিক:বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবসেসিভ-রিচ হিস্ট্রি, পরাজয়ের ভীতি, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা—এসব মিললে যিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত, তিনি সহজেই অতি রূঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন। দ্রুত মানসিক হেল্প ও সামাজিক সেফটি নেট না থাকলে পরিণতি এমন ভয়াবহ হতে বাধ্য।

তদন্তের কী প্রশ্ন থাকা প্রয়োজন?
তদন্তকারী আরএমপি দলের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন রয়েছে, যা ঘটনার সত্যতা উন্মোচনে অপরিহার্য:
১. প্রমাণ-ওভারল্যাপ: অভিযুক্তের কথা ও পরিবারের বর্ণনা কোথায় কোথায় মিলছে না? মুমূর্তকালে কে প্রথম হাতেকলম করে এবং ধারালো অস্ত্র কার কাছ থেকে এল—এসব ফরেনসিকভাবে খতিয়ে দেখা জরুরি।
২. ক্ষমতার প্রভাব: ঘটনার সূচনায় ‘ক্ষমতাশীল’ পক্ষের দ্রুত প্রশাসনিক/আইনি গ্রহণযোগ্যতা কি তদন্তকে কোনোভাবে প্রভাবিত করেছে?
৩. মনস্তাত্ত্বিক ইতিহাস: অভিযুক্তের পূর্বে সিলেটে জেলবন্দি হওয়া, পুলিশের সঙ্গে পূর্বের যোগাযোগ এবং সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য-সামঞ্জস্যের অভাব এই অপরাধের জন্ম দিয়েছে কি না?

বিচার বিভাগ ও সমাজের করণীয় (প্রস্তাবনা)বিচার ব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এবং এমন নৃশংস ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে করণীয়:
দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত: আরএমপি’র তদন্ত দলকে দ্রুত, স্বচ্ছ ও ফরেনসিক ভিত্তিক তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।
মানসিক মূল্যায়ন ও হেল্পলাইন: সম্পর্ক-ভিত্তিক সংঘাতগুলোর আগেই স্থানীয় স্তরে কনফ্লিক্ট-মিটিগেশন ও মানসিক সহায়তা (হেল্পলাইন) রাখা জরুরি।
আইনি রক্ষাব্যবস্থা জোরদার: ‘ক্ষমতাশীল’ কেউ যেন অসহায়কে আইনি পথে দমন না করতে পারেন, সে বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।সচেতনতা বৃদ্ধি: সমাজে ব্যক্তিগত সম্পর্ক সংক্রান্ত বিরোধকে ‘ইজ্জত’ বা ‘পরিবারীয় সম্মান’–এর নাম করে সহিংসতা করা হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত তৈরি করতে হবে।

এই মর্মান্তিক ঘটনা সমাজের প্রতি একটি বড় শিক্ষা। ব্যক্তিগত সম্পর্ক যখন সামাজিক কুসংস্কার, ক্ষমতার অসাম্য ও মানসিক ভাঙনের সঙ্গে মিশে যায়, তখন তার প্রাথমিক ভুক্তভোগী হন মধ্যপংক্তির মানুষ। এই ঘটনার তদন্ত পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র, সমাজ ও সাংবাদিকতাকে একত্রে কাজ করে ‘মানবিক-আইনি’ প্রতিক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 somoyermullo
Developed By : Bongosoft.org