
আবদুল মালেক রাজশাহী
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার বাসার রোড এলাকায় এক বন্ধুর হাতে আরেক বন্ধুর স্ত্রীর সোনার চেইন প্রতারণা করে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত যুবক দীপ (২০), রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানাধীন বাসার রোড এলাকার মানিকের ছেলে। ভুক্তভোগী সিজানের অভিযোগ—বন্ধুর মাধ্যমে সরকার জুয়েলার্সে চেইন বন্ধক রাখার পর সেই চেইনটি প্রতারণা করে বিক্রি করে দিয়েছেন দীপ।
ঘটনাটি ঘটে গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর)। সিজান জানান, আর্থিক সংকটে পড়ায় স্ত্রীর সোনার চেইন বন্ধক রাখার জন্য তিনি তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদীপকে অনুরোধ করেন। দীপ সরকার জুয়েলার্সে চেইনটি ৩০ হাজার টাকায় বন্ধক রাখেন। এর মধ্যে ২৩ হাজার টাকা সিজান পান, বাকিটা নিজের কাছে রাখেন দীপ।
তবে ২৯ অক্টোবর (শনিবার) সিজান চেইনটি ফেরত চাইলে দীপ নানা তালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে স্বীকার করেন যে, তিনি বন্ধক রাখা সোনার চেইনটি বিক্রি করে দিয়েছেন।
সিজান অভিযোগ করেন, “আমি চেইন ফেরত চাইলে দীপ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। পরে মা থানায় অভিযোগ করেন। এএসআই রিপন তদন্তে গিয়ে দীপকে বাড়িতে পাননি। তখন দীপের বাবাকে ১০ দিন সময় দেন মিমাংসার জন্য।”
কিন্তু নির্ধারিত সময় শেষে দীপ কোনো চেইন ফেরত দেননি। বরং, সিজান দাবি করেন—দীপ তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, “তোর বউকে নিয়ে আয়, দেখি তখন চেইন দেই কিনা।”
অভিযুক্ত দীপ নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “সিজান ২১ অক্টোবর তারিখে তার স্ত্রীর চেইন বন্ধক রাখতে আসে। আমি বন্ধুর বিপদে পড়ে সাহায্য করি। পরে জানতে পারি সেই মেয়েটা তার স্ত্রী নয়। তাই আমি বলেছি, মেয়েটাকে সাথে নিয়ে আসলে তবেই চেইন ফেরত দেব, না হলে না।”
এ বিষয়ে অভিযুক্তের পিতা মানিকের কাছে সোমবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি’র ব্যাপারে আমি জানি। কিন্তু ভাই এরা বন্ধু বন্ধু লেনদেন করেছে এতে আমাকে কেন টানা হচ্ছে। ভাই আপনি বলেন সিজানের সমস্যা, তার টাকার প্রয়োজন সে নিজে যেয়ে বন্ধক রাখবে আমার ছেলের মাধ্যেমে কেন বন্ধক রাখতে হবে। এখন এরা এইসব ঝামেলা বার বার করবে আর আমাদের বার বার সমাধান করতে হবে কেন। আচ্ছা, ভাই আমাকে ২ ঘন্টা সময় দেন আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলে দেখছি।
একইদিন বিকাল ৫টায় মুঠোফেনে জানতে চাইলে, তিনি বলেন আমার ছেলে আমার ফোন ধরছে না, আগামীকাল আমার ছেলের সাথে কথা বলে জানাবো।
পুলিশের বক্তব্য
বোয়ালিয়া মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এএসআই রিপন বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা সরজমিনে গিয়েছিলাম। বিবাদীকে পাইনি। তার বাবাকে মিমাংসার পরামর্শ দিয়েছিলাম। তবে বাদী যদি মামলা করতে চান, আমরা মামলা নেব।”
থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আমি ছুটিতে ছিলাম, তাই বিষয়টি আগে জানতাম না। তবে বাদীকে থানায় এনে বিস্তারিত শুনে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অনুসন্ধানে যা উঠে এসেছে,
একাধিক এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীপ ও সিজান দীর্ঘদিনের বন্ধু ছিলেন। দীপের বিরুদ্ধে অতীতেও ছোটখাটো এমন প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। তবে কোনো লিখিত অভিযোগ থানায় হয়নি।
এ ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, “বন্ধুত্বের আড়ালে এমন প্রতারণা সমাজের জন্য বড় সতর্কবার্তা।”
বন্ধুত্বের বিশ্বাস ভেঙে প্রতারণার এই ঘটনাটি কেবল ব্যক্তিগত ক্ষতির নয়, এটি সামাজিক আস্থার ওপরও আঘাত হানে। পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটন ও অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা।
11/11/25