সোহেল কবির, স্টাফ রিপোর্টার
রূপগঞ্জের প্রায় সময় দেখা যায় বেপরোয়া বাইক চালক দ্রুতগতি গত মঙ্গলবার চালিয়ে পড়ে যান মামুন (২২) মিয়া, ততক্ষনাৎ একটি প্রাইভেটকার তার মাথায় চাপা দেয়। স্পটেই মারা যান মামুন মিয়া। পূর্বাচলের ৩০০ ফিট সড়কসহ রূপগঞ্জের এসিয়ান হাইওয়ে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কগুলো এখন এক ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। পুলিশ বলছে বেপরোয়া গতিই ক্ষতির কারন। গতিই প্রতিনিয়নত কেড়ে নিচ্ছে তাজা তাজা প্রাণ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলছে, গত মাসে শুধু ৩০০’শ ফুট সড়কেই প্রাণ হারিয়েছে ১১ জনেরও বেশি। সড়কটিতে মোটরসাইকেল চালকদের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনাও ঘটছে বেশি বেশি। গত পাঁচ বছরে সড়কটিতে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মারা যান ১৭৫ জন। পুলিশ বলছে, এসবের ৯০ শতাংশই মোটরসাইকেলে ঘটেছে।
স্থানীয় জনগন ও পুলিশের ভাষ্যমতে, রাত যত গভীর হয়, বাইকাররা তত বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে সড়কে। যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের কারণে দ্রুতগতিতে গাড়ি চলাচল বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। অভিযান বন্ধ হওয়ার পর আবারও শুরু হয়েছে বেপরোয়া গতিতে বাইক চলাচল। সড়কে কয়েকটি চেকপোস্ট থাকলেও কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না বেপরোয়া বাইক চলাচল।
সড়কের এই নৈরাজ্য বন্ধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি জানিয়ে স্থানীয়রা বলছে, দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি কমবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিনই এখানে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনার খবর জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এছাড়াও কিশোর-তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল রেসের কারণেও অহরহ সড়কে অকালে প্রাণ ঝরছে। গত ১৬ সেপ্টম্বর রাতে স্কুল ছাত্র কাব্য তার বন্ধু সুজানাকে নিয়ে ঘুরতে আসে পূর্বাচলের এই সড়কে। বউরারটেক এলাকায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে লেকে ডুবে যায়। ১৭ তারিখে সুজানার মরদেহ এবং ১৮ তারিখ কাব্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ১৮ তারিখে এই সড়কের সুলফিনা ভূঁইয়াবাড়ি ব্রিজে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় ঘটনাস্থলে মারা যান আব্দুর রউফ ও সিপন নামের দুই ব্যবসায়ী।
শুধু দুর্ঘটনাই নয়, এসব সড়ক ঘিরে রয়েছে আরো নানা অনিয়ম। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, উল্টো পথে যানবাহন চলা থামছে না। হকারদের অবৈধ দখলদারিও রয়েছে এখানে। সেই সঙ্গে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করার চিত্র চোখে পড়ছে নিয়মিত। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয় না, যা নিরাপত্তাহীনতা আরো বাড়িয়ে তুলছে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সড়কের আশপাশে খোলা বাজার থাকায় সেখানে গভীর রাত পর্যন্ত উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিদের ভিড় থাকে। এ সময়ে রাজধানী ও আশপাশের এলাকার কিশোররা মাতাল অবস্থায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে গাড়ি চালায় এই সড়কে। চেকপোস্টের অভাব ও প্রশাসনের নজরদারির শিথিলতার সুযোগেই তারা এমন ঝুঁকিপূর্ণ কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছে।
রূপগঞ্জ থানার অফিসারইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের লোকবলের সঙ্কট রয়েছে। তারপরও আমরা স্বাধ্যমত চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। টহল পুলিশ এসব সড়কে রাতে সক্রিয় থাকে। আগের চেয়ে অনেকটা দুর্ঘটনা কমে আসছে। আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।