
এস এম মামুন, যশোর
মানবিক উদ্যোগে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন করোনা যোদ্ধা ডা. মেহেদী হাসান। নিজস্ব অর্থায়নে কেনা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তিনি যশোরের মনিরামপুরে চালু করেছেন ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’—যা পুরোপুরি মানবসেবায় নিবেদিত। ২০২৪ সালের জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত মনিরামপুরের মৃত ব্যক্তিদের একশোর বেশি মৃতদেহ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এনে দিয়েছেন এই সেবা।
এর মধ্যে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৩৭ জন প্রবাসীর লাশ এবং খুলনা-যশোর-মনিরামপুরসহ আশপাশের অঞ্চল থেকে ৬৫টি মৃতদেহ বিনামূল্যে পরিবহন করা হয়েছে। পাশাপাশি নামমাত্র মূল্যে ৭০০–র বেশি রোগী অ্যাম্বুলেন্স সেবা পেয়েছেন।
কোভিড-১৯ মহামারির সময় ডা. মেহেদী হাসান শুধু মনিরামপুর নয়, সারাদেশে ২০ হাজার করোনা রোগীকে ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করেন। মানবিক সেবার স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার অফিস, আইইইবি এবং ওআইসি ইয়ুথ ক্যাপিটাল ২০২০ থেকে সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিভাগে কর্মরত।
পরিবারগুলোর কৃতজ্ঞতা
মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুল খালেকের লাশ ফেরত আনার পর তার শ্যালক রবিউল ইসলাম বলেন, “ধারদেনা করে লাশ আনলাম, কিন্তু মনিরামপুরে পৌঁছাতে এক টাকাও লাগেনি—‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’ সেটা বিনামূল্যে করেছে।”
ধলিগাতির ইকবাল হোসেন জানান, “দেড় বছরের মেয়ের লাশ বিনামূল্যে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন।”
কৃষ্ণবাটীর অসিত বৈরাগী ও শ্যামকুড় গ্রামের হারুনুর রশিদও একইভাবে ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’র প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সেবার সার্বিক ব্যয় বহন করছেন তারা
পরিচালক মো. শাহ্ জালাল জানান—
মনিরামপুরের ভেতরে রোগী পরিবহনে ভাড়া মাত্র ৩০০ টাকা
মনিরামপুর–যশোর ৬০০ টাকা
ঢাকা ৭,০০০ টাকা
খুলনা ২,০০০ টাকা
মৃতদেহ পরিবহনের ক্ষেত্রে মনিরামপুর বাসীর জন্য সম্পূর্ণ ফ্রি, এমনকি পদ্মাসেতুর টোলসহ অন্যান্য খরচও তারা বহন করেন।
প্রতিষ্ঠাতার স্বপ্ন
ডা. মেহেদী বলেন, “পারিবারিক অনুপ্রেরণা থেকেই মানবতার সেবায় এগিয়ে এসেছি। মানুষের সাড়া দেখে ‘আমাদের অ্যাম্বুলেন্স’ বহরে ফ্রিজিংসহ আরও তিনটি অ্যাম্বুলেন্স যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।”
মানবতার এই অনন্য উদ্যোগ এখন মনিরামপুরবাসীর আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে।