আব্দুল্লাহ আল মামুন, যশোর
দেশের অন্যতম বৃহত্তর উপজেলা যশোরের মণিরামপুরে সর্বত্রই এখন বেওয়ারিশ কুকুর আতংক বিরাজ করছে। কুকুরের আক্রমন হতে রক্ষা পাচ্ছেনা কেউই! এক পৌরসভা ও ১৭ ইউনিয়ন জুড়ে বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমন দৈনিক হতাহতের অভিযোগের পরও কর্তৃপক্ষের নীরবতায় জলাতঙ্কের আশংকায় প্রায় ৪ লক্ষ জনসাধারণ। গত ৩দিনে অর্থাৎ ৭২ ঘন্টার ব্যবধানে মণিরামপুর পৌরসভার কয়েকটি এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমনের স্বীকার হয়ে এক নারীর (১) মৃত্যু সহ সর্বমোট ১৭ জনের আহতের খবর পাওয়া গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য মোতাবেক,প্রতিদিনই কুকুরের আক্রমনের স্বীকার হয়ে একাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসলেও রেবিক্স ভ্যাকসিন না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অনত্র সেবা নেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছারতে বাধ্য হচ্ছে রোগীরা।
তথ্য আছে,চলতি সপ্তাহের শনিবার (১লা নভেঃ) পৌরসভার বিজয়রামপুর গ্রামের এক নারী ও শিশু সহ ৮ জনকে আক্রমণ করে বেওয়ারিশ কুকুরের দল।ঐ দিনই পৌরসভার কামালপুর গ্রামে মাঠ হতে কাজ শেষে ফেরার পথে ফাঁকা রাস্তায় দারিয়ে থাকা একদল বেওয়ারিশ কুকুর ৩ জন ব্যক্তিকে আক্রমন করে। অভিযোগ আছে,বিজয়রামপুর গ্রামের কুকুরের আক্রমনের স্বীকার হওয়া ৮জনের মধ্য মৃত মফিজ বিশ্বাসের স্ত্রীকে নিয়ে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে কর্তৃপক্ষ রেফার্ড দিলে ঘঠনার পর চিকিৎসারত অবস্থায় গত সোমবার রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ঐ নারীর মৃত হয় বলে এ তথ্য নিশ্বিত করেছেন মৃতের ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান। পরদিন অর্থাৎ সোমবার বেলা ১১টার দিকে পৌরশহরের তাহেরপুর গ্রামে কুকুরের দল আক্রমণ করে পরপর উপজেলা বিএনপির সিঃ সহ-সভাপতি মোঃ মফিজুর রহমানের স্ত্রী নাজমা বেগম(৪৫),একই স্থানে বিরাট মন্ডল(৬০),সুফল মন্ডল(৮৫) সহ একই এলাকার ৫,৭, ৮ বছরের ৩ শিশুকে।
তথ্যসূত্র বলছে,গেলো ৪ বছর মণিরামপুরে বেওয়ারিশ কুকুর নিধন বা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে দেখা যায়নি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসনের। দিন গেলেই বেড়ে চলেছে মনিরামপুর পৌরশহর সহ উপজেলার সর্বত্রই বেওয়ারিশ কুকুরের আনাগোনা। বেওয়ারিশ কুকুর আতংকে কোমলমতি শিশু সহ উপজেলার সকল বয়সী মানুষ। দলবদ্ধ বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমণে প্রাই পড়তে দেখা গেছে খুব সকালে পড়তে আসা শিক্ষার্থী,বাড়ির পাশে বেঁধে রাখা গরু-ছাগল,সন্ধার পরপরই বৃদ্ধি পাই এ সমস্ত কুকুরের উৎপাত।এমনকি দলবদ্ধ কুকুরের সামনে একা কেউ পড়ে গেলে আক্রমণ করে বসে দলবদ্ধ বেওয়ারিশ কুকুর। কুকুরের আক্রমনে আহত নাজমা বেগমের ছেলে মোঃ মাসুদ পারভেজ রুবেল অভিযোগ করেন,শুধু আমার মা নই দৈনিক অসংখ্য লোক বেওয়ারিশ কুকুরের আক্রমনের স্বীকার হলেও হাসপাতালে নাই ভ্যাকসিন।আমার সমার্থ থাকলেও তিন ডোজের রেবিক্স ভ্যাকসিনের মূল্য প্রায় ১৫শ টাকা যা নিম্ন শ্রেনীর মানুষের ক্ষমতার বাইরে।সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে,সাধারন মানুষ স্বাস্থ্য ঝুকির পাশাপাশি এখন কুকুরে জন্য অনিরাপদ,এ বিসয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরী।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ব্যাবস্থা হিসাবে ৩শ ডোজের ৪৬ ভয়েল রেবিক্স ভ্যাকসিন সরবরাহ হলেও ৮/১০দিনের মধ্য সেটা শেষ হওয়াতে চরম বিপাকে পড়েছে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষ-এমনই কথা বলছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তত্বাবধায়ক মোঃ ফয়েজ আহম্মেদ ফয়সাল।
বেওয়ারিক কুকুর নিধনের বিপরীতে গেলো বছর ৩০শে জুলাই হাইকোর্টের নির্দেশোনা মোতাবেক ভ্যাকসিন প্রয়োগে কুকুর না মেরে কয়েকটি প্রক্রিয়া অবলম্বনের মাধ্যমে বেওয়ারিশ কুকুরের স্থানান্তরের যোক্তিক রায়কে প্রধান্য দিয়ে খুবই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে এ মর্মে তথ্য নিশ্চিত করলেও এখনো পর্যন্ত সে প্রক্রিয়া নিয়ে কোন ধরনের কার্যক্রম করতে দেখা যায়নি মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত তামান্না'কে।
জাতীয় স্বাস্থ্য গেজেট অনুযায়ী,গত বছরের ১৬ জুলাই রেজিস্ট্রার্ড পোস্ট এবং ইমেইলের মাধ্যমে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এম জামিউল হক ফয়সাল, কামরুল হাসান রিগ্যান এবং মো. জাকির হাইদারের পক্ষে আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল হাদী এ নোটিশ পাঠিয়েছিলেন। নোটিশে বলা হয় মানুষের নিরাপত্তা বিধানকে প্রাধান্য দিয়ে এবং বেওয়ারিশ কুকুরের প্রাণী অধিকার এবং জীবনের নিরাপত্তা সমুন্নত রেখে বন্ধ্যাকরণ, আবাসন নিশ্চিতকরণ, টিকাদানসহ অন্যান্য উপায়ে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত আবশ্যক। ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু পদক্ষেপ নিলেও তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। নোটিশটিতে বেওয়ারিশ কুকুরের বন্ধ্যাকরণ, আশ্রয়স্থল নিশ্চিতকরণ, টিকাদান অভিযান, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, শক্তিশালী আইন প্রয়োগ, মোবাইল পশুচিকিৎসা ক্লিনিক স্থাপন, প্রাণী নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণ, জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ, প্রাণী অধিকার সংরক্ষণে এনজিওদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব, কুকুরদের মাইক্রোচিপিং এবং নিবন্ধন, জরুরি প্রতিক্রিয়া দল গঠন, খাদ্য স্টেশন, কুকুর জনসংখ্যার ওপর গবেষণা, ফস্টার কেয়ার প্রোগ্রাম পরিচালনা, স্কুল পাঠ্যক্রমে প্রাণী কল্যাণের অন্তর্ভুক্তি, নবজাতক কুকুরছানাদের যত্ন এবং কুকুরদের আচরণগত প্রশিক্ষণের দাবি জানানো হয়েছে, যা বেওয়ারিশ কুকুরের প্রাণী অধিকার অক্ষুণ্ন রেখে কুকুরের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করে জননিরাপত্তা বিধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।
মণিরামপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডাঃ মোঃ তৌহিদুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান,উল্লেখিত হায়কোর্টের রায়ের বিপরীতে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা না থাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের স্থানান্তর প্রক্রিয়া মন্থর হয়ে আছে। তাছাড়া দক্ষ জনবল,সরাঞ্জম ও ভ্যাকসিন সংকটে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়না।