আমির উদ্দিন বাবু পোরশা(নওগাঁ)প্রতিনিধি
আমির উদ্দীন বাবু তৈজসপত্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্তি পথে নওগাঁর পোরশা নিতপুরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প। মাটির তৈরী জৈসপত্রের স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, সিরামিক, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম সহ বিভিন্ন ধাতব দ্রব্যের তৈরি নানা রকম আধুনিক তৈজসপত্র। মানুষের রুচির পরিবর্তন চাহিদা কম, কাঁচামালের দুস্প্রাপ্যতা, বেশীদাম ও পুঁজির অভাবে বাজার প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারার ফলে বিলুপ্ত হতে চলেছে এই মৃৎশিল্প। মৃৎশিল্পের জন্য উপজেলার সদরের নিতপুর পালপাড়া একসময় ব্যাপক পরিচিত ছিল। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আজ তা বিলীন হতে চলেছে। এখন চলছে এ পেশার আকাল। হয়তো একসময় বাস্তবে এ পেশার লোকজন থাকবেনা, থাকবেনা মৃৎশিল্পের অস্তিত্ব। সরজমিনে নিতপুর পালপাড়ায় গিয়ে দেখাগেছে, মৃৎশিল্পের কারিগররা এখন অনেকেই বাপ-দাদার এ পেশা ছেড়ে দিয়ে কেউ চার্জার ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহন চালিয়ে আবার দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। যারা এখনও এ পেশার সাথে জড়িত তারা অনেকেই আধুনিক শিক্ষা, চিকিৎসাসহ আধুনিক জীবনযাত্রার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে বসবাস করছেন। মৃৎশিল্পী মৃত ভোরন পালের ছেলে নারায়ন পাল জানান, বর্তমান সময়ে মানুষের সাংসারিক জীবনে মৃৎশিল্পের খুব একটা ভ‚মিকা রাখেনা। একসময় ছিল ঘন্টায় কলস বিক্রি হতো ৫০০টি এখন দুই মাসে ২০টি কলস বিক্রি হয় না। তাদের তিন ভাইয়ের পরিবারে ২৪জন সদস্য। এব্যবসা দিয়ে তাদের ভোরন-পোষন ঠিকমত করতে পাচ্ছেনা বলে তিনি জানান। বতর্মানে এ কাজের সাথে ২০ঘরের লোকজন জড়িত আছে বলেও তারা জানান। একইপাড়ার মৃত বিশ্বনাথ পালের ছেলে লাল বিহারী পাল জানান, বর্তমানে তাদের ব্যবসা খুব সোচনীয়ভাবে চলছে। একটা সময় ছিল যখন মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাসন, ঘটি, সরাই, কলস, পয়সা জমানোর ব্যাংক, পুতুল ইত্যাদি তৈজসপত্রের বিকল্প ছিল না। সরকারি সযোগ-সুবিধা না পাওয়া সহ বিভিন্ন বে-সরকারি সংস্থার ঋণ প্রদানে অনীহা এবং পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়ায় তারা কষ্টে জীবন বা সংসার চালাচ্ছেন। এতে তারা সংসার জীবনে সহ ব্যবসায় টিকতে পারছে না। ফলে বাপ-দাদার এই পেশা ছেড়ে তারা অনেকে অন্য পেশার দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তিনি আরো জানান, আগে মৃৎশিল্পের তৈজসপত্র তৈরীতে মাটি কিনতে হতো না। রঙ, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি ছিল সহজলভ্য। বর্তমানে এসব প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেশী এবং মাটি ক্রয় করার কারণে তারা ব্যবসা পরিচালনা ও মাটির জিনিস তৈরীতে হিমশিম খাচ্ছেন। একারনে পোরশার মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্ত হতে চলেছে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার ব্যাপারে কারো কোনো উদ্যেগ নেই। ভবিষ্যতে তারা এ শিল্পের মাধ্যমে তারা যেমন তাদের পরিবার ও দেশের একটি ঐতিহ্য ধরে রাখতে পারবেন। তেমনি মৃতশিল্প সভ্যতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে এ পেশাটি। আর এর মাঝে অতিতের অনেক ইতিহাস খুঁজে পাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বলে মনে করছেন স্থানীয় পালরা। এবিষয়ে জানতে চাইলে পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফ আদনান বলেন, মৃৎশিল্প এটা আমাদের ঐতিহ্য। এই এলাকায় এটা আমাদের ধারন করতে হবে। অতিতে এদের জন্য কি করা হয়েছে তা বলতে পারবো না। তবে এখন কোন অনুদান আসলে তাদেরকে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে তিনি জানান।
সম্পাদক ও প্রকাশক : মো: রফিকুল ইসলাম
নির্বাহী সম্পাদক: মো: আব্দু্ল্লাহ্ আল ওয়াদুদ
বার্তা সম্পাদক: মো: রাজন আলী