
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিনিধি,,
হাসিনুজ্জামান মিন্টু,,
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলীর শেষ বিদায়ে দেখা গেল চরম অব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক গাফিলতি। নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হলেও না আসায় পুলিশের অপেক্ষায় প্রায় দেড় ঘণ্টা মরদেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে স্বজন ও এলাকাবাসীকে। শেষ পর্যন্ত দায়িত্বহীনভাবে সম্মাননা প্রদানের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।
গত বুধবার (১৯ নভেম্বর) ভোরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস আলী মৃত্যুবরণ করেন। পরিবার ও স্থানীয় প্রশাসনের নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, বিকেল ৪টায় রাষ্ট্রীয় সম্মাননা এবং এরপর সাড়ে ৪টায় জানাজা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু যথাসময়ে পুলিশ বা প্রশাসনের কেউই সেখানে উপস্থিত হননি। দীর্ঘ প্রতীক্ষায় বিরক্ত হয়ে অনেক মুসল্লি স্থান ত্যাগ করতে শুরু করলে পরিবারের সিদ্ধান্তে বিকেল ৫টায় কাশুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা সম্পন্ন করা হয়।
জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য গোরস্থানে নেওয়ার পর সেখানে পৌঁছান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহসান উল হক। তার অনুরোধে উপস্থিত মানুষ আরও প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকেন। অবশেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে পুলিশ সদস্যরা আসেন এবং মাগরিবের নামাজের পর সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা জানিয়ে ফিরে যেতে গিয়ে জনরোষের মুখে পড়েন।
বীর মুক্তিযোদ্ধার ভাই ইলিয়াস আলী বলেন, “আমার ভাই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছেন। জীবনে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছেন, কিন্তু মৃত্যুর পরে এমন অবহেলা আমাদের জন্য অপমানজনক।”
ইউনুস আলীর একমাত্র ছেলে নুর হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান,
“প্রশাসনের এমন আচরণ ক্ষমার অযোগ্য। বাবার মর্যাদাকে তারা হেয় করেছে। বহু মানুষ আমাদের মুখের সামনে কটু মন্তব্য করেছে—এটার সুযোগ করে দিয়েছে পুলিশ।”
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজি ফাহিম উদ্দীন আহাম্মদ বিষয়টিকে “অত্যন্ত দুঃখজনক ও অমর্যাদাকর” উল্লেখ করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহসান উল হক জানান, দূরত্বের কারণে বিলম্ব হয়েছে।
অন্যদিকে বালিয়াডাঙ্গী থানার ওসি দুরুল হোদা বলেন, “পরিবার সময়মতো জানায়নি। পুলিশ লাইন থেকে আসতে সময় লাগেই।”
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মফিজুর রহমান জানান সম্পূর্ণ ভিন্ন তথ্য—
“পরিবার যথাসময়েই জানিয়েছে। আগে স্থানীয় থানার পুলিশ এ দায়িত্ব পালন করত, এখন ঠাকুরগাঁও থেকে আসায় কিছুটা দেরি হয়েছে।”
বীরযোদ্ধার শেষ বিদায়ে এমন বিশৃঙ্খলতা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ বক্তব্য প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে এলাকার মানুষের কাছে।