মোঃ আজমির হাসান র্স্টাফ র্রিপোটার কর্ণফুলী,চট্টগ্রাম।
ঢাকার নিউ এলিফ্যান্ট রোডের আলপনা প্লাজার ছোট্ট এক কম্পিউটার দোকানের মালিক ছিলেন ফারুক চৌধুরী। সেখান থেকে কয়েক বছরের ব্যবধানে তিনি হয়ে ওঠেন চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার আলোচিত রাজনীতিক ও শত শত কোটি টাকার মালিক। কীভাবে এই উত্থান? স্থানীয়দের ভাষায়—ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকালে “আঙুল ফুলে কলাগাছ” হওয়ার মতো কায়দায় তিনি ধনকুবের বনে যান।
রাজনীতিতে প্রবেশ ও ক্ষমতার দাপট
দশ বছরেরও বেশি আগে কর্ণফুলীতে কেউ ফারুক চৌধুরীকে চিনত না। তিনি আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্তও ছিলেন না। ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার এক প্রভাবশালী নেতার সহায়তায় পান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকের পদ। এরপর ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। ২০১৭ সালে নৌকা প্রতীকে প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায় একই পদে আসীন হন।
প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ ও নানা অভিযোগ
২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপির ১৮টি প্রকল্প থেকে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগে বিভিন্ন সময় সরকারি প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি, আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দেওয়া এবং ব্যাংক জালিয়াতির মাধ্যমে ১০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
দুদকের অনুসন্ধান শুরু
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছর ২৬ নভেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে। দুদক ইতিমধ্যেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে তার সম্পদ ও প্রকল্প সংক্রান্ত নথি সংগ্রহ করেছে। অনুসন্ধান পরিচালনা করছেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. নিজাম উদ্দিন।
মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশ
অভিযোগে বলা হয়েছে, ইয়াবা কারবারি মোহাম্মদ জাফরের ফ্ল্যাট কেনার চুক্তিপত্রে প্রধান সাক্ষী ছিলেন ফারুক। ২০১৫ সালে র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত জাফরের মাদক ব্যবসার পেছনে ফারুকের ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
সম্পদের পাহাড়
২০১৬ সালে তার ব্যবসার পুঁজি ছিল ২৮ লাখ টাকা, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকায়। তিনি অল্প সময়ে বিপুল জমি, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, গাড়ি ও স্বর্ণালঙ্কারের মালিক হন। কৃষি থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা, আর ব্যবসা থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ তার সম্পদের প্রকৃত মূল্য শত কোটি টাকার বেশি বলে স্থানীয়রা দাবি করছেন।
আইনি প্রক্রিয়া ও আত্মগোপন
গত ২৫ মার্চ চরলক্ষ্যা গ্রামে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় চট্টগ্রাম আদালত ফারুকসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তিনি আত্মগোপনে চলে যান এবং কানাডায় পালিয়েছেন বলে স্থানীয়দের ধারণা। কানাডায় তার বাড়ি ও গাড়ি রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এই সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে তার মোবাইলে কল করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।