মোঃ মিঠু মিয়া
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি
গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মধ্যে কুমুদ এলাকায় বসবাসরত মোঃ হিরু মিয়া জীবনের তীব্র বাস্তবতার সঙ্গে প্রতিদিন যুদ্ধ করে চলেছেন। জন্মগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধী এই মানুষটি নিজের ভাগ্যের সঙ্গে লড়াই করে আরবি পড়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। জীবনের কষ্টকে সঙ্গী করেও তিনি সমাজে টিকে থাকার এক বিরল উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।
ছোটবেলা থেকেই হাঁটাচলায় অসুবিধা থাকায় হিরু মিয়া নিয়মিত স্কুলে যেতে পারেননি। তবে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি গভীর আগ্রহ থেকেই তিনি স্থানীয় মাদ্রাসা ও মসজিদে আরবি শিক্ষা অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি গ্রামের শিশুদের আরবি শেখান এবং ধর্মীয় শিক্ষা দেন। সেই উপার্জনই তার জীবিকার একমাত্র অবলম্বন।
অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়া হিরু মিয়া বলেন,
ছোটবেলায় ভেবেছিলাম আমার কিছুই হবে না, কিন্তু আল্লাহর রহমতে এখন মানুষ আমাকে শ্রদ্ধা করে। আমি নিজের পরিশ্রমে যা পাই, তা দিয়েই সংসার চালাই। শুধু চাই, সমাজ ও সরকার যেন আমাদের মতো মানুষের দিকে একটু দৃষ্টি দেয়।”
গ্রামবাসীর ভাষায়, হিরু মিয়া একজন পরিশ্রমী, সৎ ও ধৈর্যশীল মানুষ। প্রতিবন্ধকতাকে কখনও দুর্বলতা হিসেবে দেখেননি তিনি। বরং নিজের সীমাবদ্ধতাকে শক্তিতে রূপান্তর করে জীবনকে এগিয়ে নিয়েছেন। প্রতিদিন গ্রামের শিশুদের কুরআন শিক্ষা দিয়ে সামান্য যা আয় হয়, তা দিয়েই পরিবারের মৌলিক চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করেন।
স্থানীয়দের দাবি, এমন পরিশ্রমী মানুষ সরকারের বা কোনো বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা পেলে তার জীবন আরও উন্নত হতে পারবে। সমাজের অনেক সক্ষম ব্যক্তি যদি হিরু মিয়ার পাশে দাঁড়ান, তবে তিনি নিজের জীবনে কিছুটা স্বস্তি ফিরে পাবেন।
হিরু মিয়া বলেন,
আমি কারো কাছে ভিক্ষা চাই না। শুধু চাই, কাজের সুযোগ পাই, যেন নিজের পরিশ্রমেই পরিবার চালাতে পারি।
দরিদ্রতা, প্রতিবন্ধকতা ও নানা প্রতিকূলতার মাঝেও হিরু মিয়া আশার আলো হারাননি। নিজের আত্মবিশ্বাস ও ধৈর্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন ইচ্ছা থাকলে শারীরিক সীমাবদ্ধতা কখনো জীবনের পথে বাধা হতে পারে না।