মোঃ আজমির হাসান
কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
কর্ণফুলী উপজেলাবাসীর প্রিয়মুখ, শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার অগ্রদূত, সমাজসেবা ও মানবতার প্রতীক, এলাকার উন্নয়ন সংগ্রামের স্থপতি আশরাফ আলী মেম্বার আর নেই। বুধবার ভোরে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় ৭২ বছর। তাঁর মৃত্যুতে পুরো কর্ণফুলী উপজেলায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া; হারিয়ে গেছে এক প্রজ্ঞাবান ও সৎ মানুষের আলোকময় উপস্থিতি।বার্ধক্যজনিত জটিলতায় শেষ বিদায়
গত কয়েক বছর ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন আশরাফ আলী মেম্বার। সম্প্রতি অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও বুধবার ভোররাতেই তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক সমাজ, ধর্মীয় নেতৃত্ব, ব্যবসায়ী ও সর্বস্তরের মানুষ শোকাহত হয়ে পড়েন।
শিক্ষা, ধর্ম ও সামাজিক উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকা
আশরাফ আলী মেম্বার তাঁর কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করেছেন শিক্ষার প্রসার ও মানবকল্যাণমূলক কাজে। স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, এতিমখানা প্রতিষ্ঠা এবং উন্নয়নে তাঁর অবদান সম্প্রদায়ভেদে সকলের কাছে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণীয় হয়ে আছে।তিনি ছিলেন—
অসহায় মানুষের ভরসাস্থল, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের,সহায়তাকারী অভিভাবক
রোগীর চিকিৎসায় ছুটে যাওয়া একজন মানবিক মানুষ
এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার অন্যতম কণ্ঠস্বর
এলাকার এক প্রবীণ শিক্ষক বলেন,
“তিনি ছিলেন সত্যিকারের একজন শিক্ষাবিদ, যাঁর বিশ্বাস ছিল—শিক্ষাই সমাজ পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।”
জনদরদী ও নির্লোভ চরিত্রের জন্য ছিলেন সবার শ্রদ্ধার পাত্র
আশরাফ আলী মেম্বারের ব্যক্তিজীবন ছিল সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও মানবসেবায় পরিপূর্ণ। ক্ষমতা বা পদ-পদবীর প্রতি তাঁর আকর্ষণ ছিল না। বরং এলাকায় যে কোনো সমস্যায় সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল তাঁর নিত্যদিনের কাজ। ব্যক্তিগত সম্পদ, সময় ও শ্রম ব্যয় করে তিনি মানুষের কল্যাণে যে ভূমিকা রেখেছেন, তা এখন কিংবদন্তির মতো ছড়িয়ে আছে কর্ণফুলীর আনাচে–কানাচে।
একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন,
“তিনি ছিলেন এলাকার শান্তি, সহযোগিতা ও ভ্রাতৃত্বের প্রতীক। তাঁর মতো নির্লোভ মানুষ পাওয়া আজকের সমাজে বিরল।”
এসব অবদানে তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক আলোকবর্তিকা
সড়ক, ড্রেনেজ, গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা—সবক্ষেত্রেই আশরাফ আলী মেম্বারের ছিল দৃষ্টিনন্দন উদ্যোগ। মানুষের সুখে-দুঃখে তিনি ছিলেন এক নির্ভরতার নাম। তাঁর মৃত্যুকে কর্ণফুলীর জন্য একটি অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবে দেখছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।জানাজা ও দাফন
পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, আজ বিকেলে তাঁর নিজ গ্রামে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এতে হাজারো মানুষ অংশগ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হবে।
সর্বমহলের শোক ও শ্রদ্ধা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, উপজেলা প্রশাসন, শিক্ষক সমাজ, ওয়াকফ কমিটি, সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন—
“কর্ণফুলীর মানুষ এক অভিভাবকসুলভ ব্যক্তিত্বকে হারালো। তাঁর শূন্যতা দীর্ঘদিন পূরণ হওয়ার নয়।”