
সংস্কার ও পুনর্নির্মাণে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
নুরুল ইসলাম সুমন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ প্রতিনিধি
চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ—যা শুধু বাংলাদেশের নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যের অংশ—এখন নতুন রূপে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রায় সাড়ে চার শতাব্দী আগে, ১৬৬৭ খ্রিষ্টাব্দে (১০৭৮ হিজরি) সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে নির্মিত এ প্রাচীন স্থাপনাটি এখন পুনঃনির্মাণ ও সংস্কারের মাধ্যমে “বিশ্ব ঐতিহ্যের স্মারক” হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পথে।
(রবিবার) সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম ক্লাব মিলনায়তনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ মুসল্লী পরিষদের যৌথ আয়োজনে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর ও মসজিদের খতিব, আওলাদে রাসুল (সঃ) হযরত সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসাইন তাহের জাবেরী আল মাদানী।
প্রধান অতিথি ছিলেন মাননীয় ধর্ম উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন।
সভা পরিচালনা করেন মানবাধিকার আইনবিদ ও মুসল্লী কমিটির সহ-সম্পাদক জিয়া হাবীব আহসান।
স্বাগত বক্তব্য দেন মুসল্লী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাৎ হোসেন,
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ মাহবুবুল হক,
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আব্দুস সালাম খান,
দৈনিক আজাদীর সম্পাদক আলহাজ্ব এম. এ. মালেক,
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল করিম,
মুসল্লী কমিটির সভাপতি সালাহউদ্দিন কাসেম খান এবং
সিএমপি কমিশনারের প্রতিনিধি ডিসি (সাউথ) মো. আলমগীর হোসাইন প্রমুখ।
সভায় স্থপতি প্রতিষ্ঠান “এইজ অ্যান্ড এইজ আর্কিটেক্ট স্টুডিও”র বিশেষজ্ঞরা প্রজেক্টরের মাধ্যমে মসজিদের নতুন নকশা ও পুনর্নির্মাণ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন।
বক্তারা বলেন, মোগল আমলে এটি ছিল চট্টগ্রামের ইসলামি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় প্রচারের কেন্দ্র। “সানিয়ে কাবা” বা “দ্বিতীয় কাবা” নামে খোদাই করা শিলালিপিটি এই মসজিদের আধ্যাত্মিক মর্যাদা ও ঐতিহাসিক গভীরতাকে তুলে ধরে।
বর্তমানে অবহেলা ও অযত্নের কারণে মসজিদটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে; দোতলার অংশে তালা দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার স্বার্থে। এই বাস্তবতায় ধর্ম মন্ত্রণালয় ও মুসল্লী পরিষদের যৌথ উদ্যোগে “আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ পুনর্নির্মাণ ও সংস্কার প্রকল্প” হাতে নেওয়া হয়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন,
“শায়েস্তা খাঁর আমলে নির্মিত এ মসজিদ মুসলিম বিজয়ের স্মারক এবং চট্টগ্রামের ধর্মীয় ঐক্য ও সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। এ ঐতিহ্য শুধু পাথর-ইটের স্থাপনা নয়—এটি আমাদের বিশ্বাস, ভালোবাসা ও ইতিহাসের প্রতিধ্বনি।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শাহ মো. আখতার উদ্দিন, মুসল্লী কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা আলহাজ্ব মো. হেলাল উদ্দিন, শিল্পপতি ও কেডিএস গ্রুপের এমডি সেলিম রহমান, প্যাসিফিক জিন্সের সৈয়দ তানভীর আহমদ, ডায়মন্ড সিমেন্টের আলহাজ্ব এম. এ. হাকিম, স্মার্ট গ্রুপের মোস্তাফিজুর রহমানসহ চট্টগ্রামের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।
সভায় বক্তারা সরকারের পাশাপাশি নগরবাসী, ব্যবসায়ী ও দানশীল মহলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। তারা বিশ্বাস প্রকাশ করেন—
“আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের পুনর্নির্মাণ শুধু স্থাপত্যের পুনর্জাগরণ নয়, এটি হবে ইসলামী ঐতিহ্যের নবযাত্রা।”